হজ্জ করার নিয়ম ও কী কী

হজ্জ করার নিয়ম কী কী

হজ্জ করার নিয়ম ও কী কী

আজকে আমরা হজ্জ করার নিয়ম তিন প্রকার, যথা ১/ তামাত্তু ২/ কিরান ও ৩/ ইফরাদ। আজকে আমরা তিন প্রকার হজ্জ করার নিয়ম সম্পর্কে জানবো। .

১/ তামাত্তু হজ্জ করার নিয়ম।

এক ইহরাম পরে ওমরাহ শেষ করে আলাদা ইহরাম পরে হজ্জ আদায় করা তামাত্তু হজ্জ করার নিয়ম বলে। বাংলাদেশ থেকে যারা হজ্জ আদায় করেন তারা তামাত্তু হজ্জ করেন। ৮ জিলহজের আগেই  ওমরাহ পালন করতে হবে। কারণ ৮ জিলহজ থেকে হজ্জের কাজগুলো শুরু করতে হবে।

➤প্রথমে তামাত্তু হজ্জ করার নিয়ম হলো ইহরাম বাধাঁ

মক্কা শরিফ গমনকারীদের জন্য নিজ নিজ মিকাত অতিক্রমের আগেই ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বাঁধা। ইহরাম বলতে সেলাইবিহীন দুটি কাপর পরিধান করা। কাপর গুলো যেকোন রং হতে পরে তবে সাদা হলে উত্তম। বাংলাদেশ থেকে হলে বিমানে ওটার আগে পড়ে নিবেন বা বিমান বন্ধরে মধ্যে পড়ে নিবেন, কারণ ইহরাম বাধাঁর পরে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে শুধু ওমরাহর নিয়ত করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইহরাম বাধাঁর পর থেকে যে কোন ছোট থেকে ছোট পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। আর বেশি বেশি করে পাড়বের ঃ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাই ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক  লা শারীকা লাকা।

➤দ্বিতীয় তামাত্তু হজ্জ করার নিয়ম হলো ওমরাহর তাওয়াফ করা

ওযু করে কাবার ঘরের চারপাশে ঘড়ির কাটার বিপরীতদিকে সাতবার ঘোরাই হলো তাওয়াফ করা। তাওয়াফ শুরুর পূর্বে হাজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া। তবে ভিড়ের কারণে এর কাছে যাওয়া সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করে তাওয়াফ শুরু করা যায়। তাওয়াফ করার সময়(মনে রাখতে হবে) ইহরামের কাপর ডান হাতের বগলের নিচে দিয়ে বাম কাদে উপরে দিতের হবে এবং পুরুষেরা দ্রুত গতির সাথে বীরের মত করে চলবে। সাতবার ঘোরা হলে দুই রাকআত নামাজ পড়া ওয়াজিব। আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা হলে সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার ‘সাঈ’ করা ওয়াজিব। সাফা মারওয়াই বিশেষ করে মনে রাখতে হবে সাফা থেকে একবার গেলে একবার হবে এবং সাফা থেকে মারওয়া আসলে দুইবার হবে। সাফা মারওযা সবুজ বাতি চিহ্নিত স্থানে পুরুষেরা দৌড়েপার করবে।

➤তৃতীয় তামাত্তু হজ্জ করার নিয়ম হলো মাথার চুল কাটা

পুরুষরা দুই ভাবে করতে পারে মাথা মুণ্ডানো ও পুরো মাথা ছাঁটানো আর মহিলাদের চুলের এক ইঞ্চি পরিমাণ কেটা ওয়াজিব। এইভাবে ওমরাহ কাজ সমাপ্ত হয়ে যায়। তারপর ইহরাম খুলে যাবতীয় কাজ স্বাভাবিকভাবে করা যাবে। 

উপরে কাজগুলো করে আপনারা ওমরাহ কাজ শেষ হয় এবং ওমরাহ সম্পন্ন করতে হবে ৮ জিলহজের আগে ।

✪হজ্জে ধারাবাহিকতা

➤৮ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত মূল হজ্জের দিন। এখন আমরা ৮ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজে যে সব কাজ করতে হবে তা নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো 

হজ্জ করার নিয়ম ও কী কী

➤ চতুর্থ ৮ জিলহজে হজ্জ করার নিয়ম হলো হজ্জের ইহরাম বাধাঁ

তামাত্তু হজ্জ কারীদের ৮ জিলহজে হুদুদে হারামের যেকোনো স্থান থেকে  হজ্জের নিয়তে পুনরায় ইহরাম বেধেঁ যোহরের আগে মিনায় পৌঁছতে হবে। ৮ জিলহজ যোহর থেকে ৯ জিলহজ  ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় পড়া সুন্নাত।

➤পঞ্চম ৯ জিলহজ হজ্জ করা নিয়ম হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্তান করা

মোহাম্ম সঃ বলেছেন হজ্জের মূল হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্তান করা।হাজ্জিরা মিনার থেকে ৯ জিলহজে ফজরের নামায়ের পরে আরফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে রাওনা দিবেন। ৯ জিলহজের একদিন আরাফাতের ময়দানে অবস্তান করে আল্লাহ উদ্দেশ্য জিকির করা ও নামায আদায় করা। যে সব হাজ্জিরা তাঁবুতে অবস্থানকারীগণ জোহর ও আসর নামাজ নিজ নিজ সময়ে মুকিম হলে চার রাকআত এবং মুসাফির হলে দুই রাকআত করে আদায় করবেন। তবে মসজিদে নামিরার জামাতে পড়লে একসময়েও আদায় করা যাবে। স্মরণ রাখতে হবে যে আরাফার সঠিক সীমান্তে পৌঁছতে ভুল করলে হজ আদায় হবে না। সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত যাওয়ার সাথে সাথেই মাগরিবের নামায না পরেই মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হওয়া এবং মুজদালিফার পোচাতে রাত হয়েগেলো মাগরিব ও এশারের নামায় এক আজানে দুই একামতে নামায আদায় করা ।

➤ ষষ্ঠ ১০ জিলহজে হজ্জ করার নিয়ম হলো পাথর বা কঙ্কর

১০ জিলহজে সুবহে সাদিকের পর কিছু সময় মুজদালিফায় অবস্থান করে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করবে। কারণ মিনায় গিয়ে শয়তানকে পাথর বা কঙ্কর মারতে হবে। মিনায় পৌঁছে শুধু বড় জামিরায় (শয়তানকে) সাতটি পাথর বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ১০ জিলহজে সুবহে সাদিকের পর থেকে পরদিন সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময়ের মধ্যে এই শয়তানকে পাথর বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। কিন্তু যদি এই সময় অতিক্রম হয়ে যায় তাহলে দম দিতে হবে। এটি সূর্যাস্তের আগে করতে পারলে উত্তম।

➤ সপ্তম ১০ জিলহজে হজ্জ করার নিয়ম হলো কুরবানী করা

১০ জিলহজে পাথর বা কঙ্কর মারার পরেই দমে শোকর বা দমে তামাত্তু অর্থাৎ  হজের কোরবানি বলা হয়, নিশ্চিত পন্থায় তা আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানির পরেই আবার মাথার চুল কাটা ওয়াজিব। বিশেষ করে ১০ জিলহজে পাথর বা কঙ্কর মারা, কোরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ওয়াজিব, আর যদি ব্যতিক্রম হয় তাহলে দম দিতে হবে। ১০ জিলহজে চুল কাটার পরে হজ্জের ফরজ তাওয়াফ করা এবং সাথে সাফা মারওযা সাই করা ওয়াজিব।১০ জিলহজ  দিবাগত রাত মিনায় যাপন করা সুন্নাত।

➤ অষ্টম ১১,১২ ও ১৩ জিলহজে হজ্জ করার নিয়ম

১১ জিলহজে ১২ জিলহজে ১৩ জিলহজে  প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় জামারায় উভয় দিন ৭টি করে ২১টি পাথর বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।  এখনে এক এক দিন ৭টি করে পাথর বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা। ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় তা শেষ করতে হবে। সূর্য হেলার পর থেকে পরদিন সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যেকোনো সময়ে এই পাথর বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা যাবে। ১৩ জিলহজে পাথর বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব সময় অতিক্রম হলে দম দিতে হবে। পাথর বা কঙ্কর মারার পরে মিনা থেকে মক্কা এসে বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। কিন্তু হজ্জ শেষে যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে পরিণত হয়ে যায়। মিনারের দিনগুলোতে মিনায়ই রাত যাপন করা সুন্নাত।

➤ উপরে নিয়ম অনুসারে অনুসরণ করে হজ্জ করা বা তামাত্তু হজ্জে করার নিয়ম শেষ হয়।

২/ কিরান হজ্জ করার নিয়ম।

এক ইহরামে যারা হজ্জ ও ওমরাহ পালন করবেন তাদের কে কিরান বল্ হয়। কিরান হজ্জ কারি মিকাত অতিক্রমের আগেই একসঙ্গে হজ ও ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বাঁধা ফরজ। মক্কা শরিফ পৌঁছে ওমরাহ তাওয়াফ করা, দুই রাকআত নামাজ পড়া, সাফা মাওয়া সাঈ করা অতঃপর ইহরাম অবস্থায়ই থাকতে হবে। সম্ভব হলে একোই সময়ে তাওয়াফে কুদুম বা আগমনী তাওয়াফ করা সুন্নাত। আগের ইহরামেই ৮ তারিখ জোহরের আগে মিনায় পৌঁছে হবে।

✪বাকি সব নিয়ম তামাত্তু হজ্জ করার নিয়ম অনুসারে করা হবে।

৩/ ইফরাদ হজ্জ করার নিয়ম।

যারা ওমরাহ ছাড়া শুধু হজ্জের জন্য মক্কায় গমন করবেন তাদেরকে বলা হয় ইফরাদ হজ্জ। ইফরাদ হজ্জ কারিদের জন্য মিকাত অতিক্রমের আগেই শুধু হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধা ফরজ এবং মক্কা শরিফ পৌছে তাওয়াফে কুদুম বা আগমনী তাওয়াফ করা সুন্নাহ।

✪ বাকি সব নিয়ম তামাত্তু হজ্জ করার নিয়ম অনুসারে করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *