কুরবানি বা ঈদুল আযহা কাকে বলে?
কুরবানি বা ঈদুল আযহা শব্দের অর্থ ত্যাগ, উৎসর্গ, বিসর্জন ও নৈকট্যলাভ ইত্যাদি। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যাক্তি মহান আল্লাহ সন্তুষ্টি ও পুরস্কার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে নির্দিষ্ট পশু জবেহ করাকে কুরবানি বা ঈদুল আযহা বলে। আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু (কুরবানী সময় সূচি) জবেহ করা যায়।
কুরবানী কোথায় থেকে আসছে?
সৃষ্টির আদিকাল থেকে কোরবানি দিয়ে আসছে নবী রাসূলগণ। কোরবানি নিয়ে দুটি ইতিহাস স্মরণীয় হয়ে আছে। তার মধ্যে একটি হলো আদি পিতা হযরত আদম আ: দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কোরবানির ইতিহাস। এবং অন্যটি হলো ইব্রাহিম আ: এর প্রিয় পুত্র ইসমাইল আ: এর কুরবানীর ইতিহাস। তবে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর কুরবানীকে অনুসরণ করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা সবাই কুরবানী করে থাকি। সুতারাং কুরবানী করা হযরত ইব্রাহিম আঃ এর সুন্নাহ বা সুন্নাত। নিম্নে কুরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করা হলো,
১/ হাবিল ও কাবিলের কোরবানি
মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) এর পুত্র দুইজন হাবিব ও কাবিল। হাবিল ও কাবিল যখন বিয়ের উপযুক্ত হয় আদি পিতা আদম (আঃ) আল্লাহর আদেশে বিয়ে ঠিক করেন। হাবিল এখানে দ্বিমত পোষণ করে না। কিন্তি কাবিলের মেয়ে পছন্দ না। তখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করতে বলেন। সেই সময় কোরবানির কবুল করার সিস্টেম ছিল, কবুল কোরবানির মধ্যে আল্লাহর কুদুরতি আগুন লেগে যেত। হাবিলের পেশা ছিল বেড়া বকরি চড়ানো। সেই হিসেবে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বেড়া বা বকরি কুরবানী করেছিল। হাবিলের কোরবানি আল্লাহ কবুল করে নিয়েছিল কুদুরতি আগুনের মাধ্যমে। কাবিল ছিলেন একজন চাষাবাদী। কাবিল আল্লাহর সন্তুষ্টির কুরবানীর জন্য চাষাবাদের কিছু ফলমূল দিয়েছিলেন। কিন্তু কাবিলের কোরবানি কবুল হয়নি।
২/ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং হযরত ইসমাইল (আঃ) এর কোরবানির ঘটনা।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে আল্লাহ নানাভাবে পরিক্ষা করেছেন তার মধ্যে একটি হলো ইবরাহীম (আঃ) এর প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানি করা। এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রতি বছর এই দিবসটি ঈদুল আযহা বা কুরবানী নামে পালন করে থাকি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে স্বপ্নযোগে আল্লাহ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি মহান আল্লাহ তালার নামে কুরবানি করার নির্দেশ দেন। ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নে এ আদেশ পেয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ১০টি উট কোরবানি করলেন। হযরত ইব্রাহিম আঃ কুরবনি করার কিছুদিন পরে পুনরায় তিনি একই স্বপ্ন দেখলেন। ইব্রাহীম (আঃ) আবারও আল্লাহ উদ্দেশ্যে ১০০টি উট কোরবানি করেন। এরপরেও স্বপ্নদেখেন তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা কুরবানি দিতে। ইব্রাহীম (আঃ) ভাবলেন, আমার কাছে তো এ মুহূর্তে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) ছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। ইব্রাহীম (আঃ) স্বপ্নের কথা প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে জানালেন। হয়রত ইসমাইল (আঃ) পিতাকে জবাব দিলেন আল্লাহর হুমুম বা আদেশ পালন করুন ইনশাল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। তখন তিনি পুত্রকে কোরবানির উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। হযরত ইসমাইল আঃ আরো বলেন পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে যেন চোখ বন্ধ করেন কারণ জবা করার সময় যেন কোন করোনা না আসে। এতপর ইযরত ইসমাইল (আঃ) এর কথা অনুসারী পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) চোখ বন্ধ করে তাঁর পুত্রকে কোরবানি করার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি দুব্বা কোরবানি হয়েছে। কারণ মহান আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম আঃ কে শুধুমাত্র পরিক্ষা করেছিলেন যেখানে নীরদিদায় আল্লাহ সন্তুষ্টি জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে পারেন। সুতারাং আল্লাহ তায়ালা সষ্টুষ্টি হয়েযান। ফলস্বরুপে হযরত ইব্রাহিম আঃ এর পুত্র ইসমাল আঃ তাঁর পুত্রের কোন ক্ষতি হয়নি। মহন আল্লাহ তালাহর ইব্রাহীম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) এর উপর সন্তুষ্টি হয়ে সকল মুসলমানদের জন্য কুরবানি করা সুন্নাত বা ওয়াজিব করে দিয়েছেন।
কুরবানী মাংস বা গুস্ত ভাগ করা নিয়ম।
কুরবানি মাংস ভাগ বলতে কিছু নাই। কারণ আপনি কুরবানী করেছেন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। আপনি সম্পুন্ন মাংস আল্লাহ জন্য বিলিয়ে দিবেন। তবে আপনি যদি চান কুরবানির মাংস রাখতে তবে রাখা যায়। সেই আনুসারে কুরবানের মাংসকে তিন ভাগকরা হবে। কুরবানের মাংস ভাগের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকতে পারবে না।
কুরবানী তিন ভাগে ভাগ করার নিয়ম
>কুরবানী মাংসের তৃতীয় ভাগের এক ভাগ আত্মীয় স্বজনদের জন্য (যারা কুরবান করেনি)
>কুরবানী মাংসের তৃতীয় ভাগের দ্বিতীয় ভাগ পারার প্রতিবেশীদের জন্য (যারা কুরবান করেনি)
>কুরবানী মাংসের তৃতীয় ভাগের তৃতীয় ভাগ নিজের জন্য( প্রয়োজন হলে)
> কোরবানি করা মাংস আপনি যদি চান হিন্দু, বুদ্ধ ও খিস্টান ইত্যাদি ধর্মিক মানুষকে দিতে চান তাহলে দেওয়া যায়।
কুরবানী করা কসাই বা পারিশ্রমিকে টাকা বা মাংস দেওয়া যাবে কি?
কোরবানির কসাইকে আশ্রমিক হিসেবে টাকা দেওয়া যায়। কোরবানির কাজে সহায়তাকারী কসাই ও তার লোকদেরও পারিশ্রমিক হিসেবে মাংস দেওয়া যাবে না।কোরবানির পশুর কোনও কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যায়না। অবশ্যই এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরও মাংস খাওয়ানো যাবে। তবে কোরবানির পশুর কোনও কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। কাজের পূর্ব পারিশ্রমিক ঠিক করে পেলতে হবে। যেহেতু পারিশ্রমিকে মাংস দিতে চান তাহলে তৃতীয় ভাগের নিজ ভাগের অংশ থেকে মাংসা দেওয়া যেতে পারে।
কুরবানি করা ফরজ বা ওয়াজিব বা সুন্নতের মোক্কাদা?
কোরবানি বা ঈদুল আযহা করা কারো উপর ফরজ না।
কোরবানী বা ইদুল আযহা সুন্নাহ মোক্কাদা বা ওয়াজিব তা উভয় দিখে দলিল আছে।
কাদের উপর কোরবানী করা সুন্নাতোল মোক্কাদা বা ওয়াজিব হয়?
যার কাছে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্য বা সম্পদ আছে তাদের উপর সুন্নাত বা ওয়াজিব। এক কথায় যাদের উপর যাকাত ফরজ তাদের কোরবানি করা সুন্নাহ বা ওয়াজিব
কুরবানির সাথে আকিকা দেওয়া যায় কি?
কুরবানী সাথে আকিকা দেওয়া যায় কিন্তু এটা সুন্নাহ না। কুরবানী দেওয়ার সময় আকিকা দিলে আকিকা আদায় হয়ে যাবে। আকিকা দেওয়া সময় হলো সাত দিন কোন কারণে দিতে না পারলে চোদ্দদিনে তাও না পারলে একুশ দিনে তাও না পারলে, যে কোন দিনে দেওয়া যায়।